আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট
আউটসোসিং বা ফ্রি-ল্যান্সিং কাজের জন্য অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে। কিন্তু সবগুলো সাইটই যে আপনার জন্য উপযুক্ত হবে এমন নয়। কারণ, একেক সাইটের একেক রকম ধরণ। কোথাও কেবল কিছু নির্দিষ্ট ধরণের কাজ পাওয়া যায়। কিছু সাইট কেবল দক্ষ প্রি-ল্যান্সারদের জন্য। কিছু সাইট সবার জন্য উন্মুক্ত। এখানে আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। আপনি আপনার পছন্দ মত কিংবা আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতার সঙ্গে মিলে যায়, এমন সাইটগুলোতে কাজ করা শুরু করতে পারেন।
আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট
পৃথবী জুড়ে কোম্পানীগুলোর কাজের ধরণ বদলে গেছে বহু আগে। অধিকাংশ কোম্পানীই এখন সরাসরি লোকজন না নিয়ে তাদের অফিসিয়াল কাজগুলো আউটসোর্স মার্কেটগুলো থেকে করিয়ে নেয়। আর যারা কাজ করে দেয়, তাদের সংখ্যা তো অগণিত। কেউ পড়াশুনা শেষ করে, কেউ পড়াশুনায় থাকা অবস্থাতেই ভবিষ্যৎ চাকরির বাজারের দূরাবস্থার কথা চিন্তা করে কাজ শুরু করে এই মার্কেটপ্লেসগুলোতে। আর আয় করে চাকরির থেকে চার গুন, কোন কোন ক্ষেত্রে আর অনেক বেশি আয়।
- গ্রাফিকস্ ডিজাইনারদের জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট
- আর্টিকেল লিখে আয় করুন মাসে ৫০ হাজার টাকা
- আর্টিকেল রাইটিং কিভাবে শুরু করবেন
আপওয়ার্ক – আপনাকে ডাকছে
পুরনো নাম ওডেক্স। ইলেন্সের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আপওয়ার্ক নামে এখন আরও বড়, আরো বিস্তৃত। প্রায় ২ মিলিয়ন ক্লায়েন্ট আর ৯ মিলিয়ন প্রি-ল্যান্সারের সবচেয়ে বড় আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস এটি। এখানে ছোট বড়, স্বল্প-মেয়াদী এবং দীর্ঘ মেয়াদী লক্ষ লক্ষ কাজ রয়েছে। এখানে ফিক্সড্ রেট এবং ঘন্টা হিসেবে কাজ করা যায়। ফিক্সড্ রেটের ক্ষেত্রে ক্লায়েন্টরা পুরো কাজটি শেষ করার জন্য একটা নির্দিষ্ট অ্যামাউন্ট উল্লেখ করে দেয় আর ফ্রি-ল্যান্সাররা নিজ নিজ ডিমান্ডের সঙ্গে মিলে কাজটি করার জন্য প্রপোজাল দেয়। কাজ শেষ হয়ে গেলে ক্লায়েন্ট পেমেন্ট করে দেয়। তবে ফিক্সড্ অ্যামাউন্টের কাজের পেমেন্টের ক্ষেত্রে আপওয়ার্ক কোন দায় দায়িত্ব নেয় না।
ঘন্টা ভিত্তিক কাজই এখানে বেশি পপুলার। কাজের ধরণ অনুযায়ী ক্লায়েন্ট প্রতি ঘন্টার জন্য একটা নির্দিষ্ট অংক উল্লেখ করে দেয়। আর ফ্রি-ল্যান্সাররা বিট করে আরো বাড়িয়ে নিয়ে কিংবা ওই অ্যামাউন্টেই কাজ নিয়ে করতে শুরু করে। আপওয়ার্কের অটোমেটিক টাইম ট্রেকার প্রতি মূহুর্তের কাজের ডাটা কালেকশন করে রাখে আর বায়ার সেগুলো দেখে নিশ্চিত হতে পারে তার কাজে কোন ফাঁকি দেয়া হচ্ছে কিনা। আর পেমেন্টের ক্ষেত্রেও কোন ফাঁকি দেয়ার অপশন নেই, কারণ ওই দায়িত্ব আপওয়ার্ক নিয়ে নেয়। এক ঘন্টা পার হলেই এই এক ঘন্টার পেমেন্ট আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়।
এই ঘন্টা হিসেবের কাজ আপনার জন্য দেশে বসে চাকরি করার মতই। একটা অফিসে আপনি ৮ ঘন্টা বা কিছুটা কম বেশি সময় নিয়ে কাজ করতেন এবং সে সময় নির্ধারণ করতো আপনার অফিস কতৃপক্ষ। আপনার তাতে কিছু করার নেই। ইনটাইম অফিসে যেতেই হবে, নৈলে চাকরি থাকবে না। আর এখানে পুরোটাই নির্ভর করছে আপনার উপর। আপনি মন চাইলে কাজ করবেন, না হয় করবেন না। আপনার প্রোপাইলেই আপনি উল্লেখ করে দিতে পারেন যে দিনে আপনি কয় ঘন্টা কাজ করবেন। যত ঘন্টা খুশি আপনি তত ঘন্টাই কাজ করতে পারবেন, বাধা দেয়ার কেউ নেই।
আপওয়ার্কে দক্ষ অদক্ষ সবার জন্যই কাজের সুবিধা রয়েছে। আপনি দক্ষ হলে তো কোন কথাই নেই, অনায়াসে কাজ পেয়ে যাবেন। আর অদক্ষ হলে আপনার জন্য অপশন হচ্ছে ‘entry-level’ এ জয়েন করা। শুরুর দিকে কাজ পেতে সময় লেগে যাবে। কিন্তু একবার একটা কাজ পেয়ে সেটাকে সফলভাবে সম্পন্ন করে দিতে পারলে ধীরে ধীরে আপনার কাজ বাড়তে থাকবে। সুতরাং, আজই শুরু করে দিন।
টপটাল – হতে পারেন টপ প্রি-ল্যান্সার
টপটাল মূলত টেকনোলোজি লাভারদের জন্য। আপনি যদি একজন সফট্ওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা একজন ওয়েব ডেবেলপার অথবা একজন সিস্টেম অ্যানালাইজার হয়ে থাকেন, তবে এ সাইটটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে। এখানে অন্যান্য কাজের সংখ্যা নাই বললেই চলে, সবই ডেভেলপমেন্ট রিলেটেড। এখানে ক্লায়েন্টের সংখ্যা নগন্য। কিন্তু জেপিমরগান, জেনডেক্স, এয়ারবিএনবিসহ বিশ্বের বাঘা বাঘা কোম্পানীগুলোই এই সাইটের প্রধান প্রধান ক্লায়েন্ট। এ রকম একটা ক্লায়েন্টের কাজ করতে পারলেই আপনার ক্যারিয়ার দাঁড়িয়ে যাবে।
কিন্তু অতোটা সহজ নয় যতটা ভাবছেন আবার অতোটা কঠিনও নয় যতটা ভয় পাচ্ছেন। টপটালের স্ক্রিন প্রপেসটা পার হতে পারলেই আপনি ইন্টারভিউ দেয়ার সুযোগ পাবেন। আর আপনার যদি যোগ্যতা থাকে আপনি অবশ্যই ইন্টারভিউ দিয়ে টিকে যাবেন। আর টিকে গেলেই আপনি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে যেতে পারেন যে, আপনি দেশে বসে বিদেশে চাকরি পাচ্ছেন। এ কোম্পানীগুলোর কাজ চাকরি থেকেও বড় কিছু।
ফ্রি-ল্যান্সার – কাজের ফ্রিডম যেখানে
আপনার যদি প্রতিযোগীতা মূলক মানসিকতা থাকে, যদি নিজেকে আউটসোর্সিং কাজের জন্য প্রস্তুত করে নিয়ে থাকেন, তাহলে প্রি-ল্যান্সার আপনার জন্য কাজের প্রিডম রেখে দিয়েছে, আপনি অনায়াসে এ সুযোগ পিক করতে পারেন। অন্য সাইটগুলোর সঙ্গে এ সাইটের সবচেয়ে বড় ভিন্নতা হচ্ছে, এখানে আপনাকে অন্য প্রি-ল্যান্সারদের সাথে প্রতিযোগীতা করে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। আর তাতেই খুলে যাবে আপনার আয়ের উৎস।
কলেজ রিক্রু্টার – কলেজে থাকতে শুরু করুন আয়
নাম দেখেই হয়তো বুঝতে পারছেন এই সাইট হচ্ছে কলেজ ছাত্রদের জন্য। এখানে সবাই সবার কলিগ, সবাই সবাইকে সাহায্য-সহযোগীতা করে থাকে টিপস্ দিয়ে, কাজ পাইয়ে দিয়ে। আপনার যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে সম্পর্ক পাতানো এবং সে সম্পর্ককে গাঢ করা। তবে এটা আপনার মেইন কাজ নয়, মেইন কাজ হচ্ছে ক্লায়েন্টের কাজ। এখানে ক্লায়েন্টরা আসে কিছুটা কম টাকায় কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য। আর যারা কাজ করে দেয় তাদের বেশিরভাগই স্টুডেন্ট, কারণ সাইটা মেইনলি স্টুডেন্টদের জন্যই করা। আপনি যদি এখনো পড়াশুনার মাঝে থেকে থাকেন, তাহলে আপনারও সুযোগ রয়েছে কলিগ রিক্রুটারে জয়েন করে বাড়তি উপার্জনের। যারা একটু কম দক্ষ, তাদের জন্য এই সাইট হতে পারে সেরা পছন্দ।
গুরু – নিজেই হয়ে উঠুন নিজের গুরু
এ সাইটে প্রত্যেক প্রি-ল্যান্সারকেই একটি করে ওয়ার্ক রুম দেয়া হয়। আপনার রুমেই আপনি কাজ করবেন। নিজের মত সাজিয়ে নেবেন নিজের রুম, রাখবেন পুরনো কাজের উদাহরণ যা দেখে ক্লায়েন্ট আপনাকে চিনবে, আপনার কাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা পাবে। আর এ সাইটের অটোমেটিক ক্রলার খুঁজে খুঁজে আপনার উপযোগী কাজগুলো আপনার রুমের টেবিলে এনে রাখবে যাতে পরবর্তীতে আপনি সেগুলো দেখে বাচাই করে পছন্দের কাজটি করতে পারেন। দারুন না!
ফ্রি-ল্যান্সার হিসেবে কাজ করা আসলেই দারন। এখানে আপনি নিজেই আপনার বস। মন চাইছে না কিংবা শরীরটা একটু মেজ মেজ করছে কিংবা একটু শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে; কোন সমস্যা নাই। অফিসের মালিক তো আপনি নিজেই। আউটসোর্সিং এর জন্য সেরা ১০টি ওয়েবসাইট এর ৫টির সঙ্গে আজ পরিচিত হলেন। বাকী ৫টির সঙ্গে পরিচয় ঘটবে শীঘ্রই।
No comments